মুক্তাগাছার মোশারফ নিহত :মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে


মুক্তাগাছার মোশারফ নিহত |মুক্তাগাছার মোশারফ নিহত |স্টাফ রিপোর্টার, ১৪ মে ২০১৫ : টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার ছাত্রলীগ নামধারী দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে ২২ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আজ সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক হল ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।নিহত শিক্ষার্থীর নাম মোশারফ হোসেন। তিনি অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়।শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত হলেও অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোশারফ হোসেন নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ব্যানার টাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন। সম্প্রতি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মোশারফবিরোধী একটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর জের ধরে গত শনিবার রাতে মোশারফের পক্ষের কর্মীরা বিভিন্ন হলে হামলা চালিয়ে মনিরুলের পক্ষের কর্মীদের মারধর করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোশারফের পক্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করে এবং অপর পাঁচজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মনিরুলের সমর্থকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফটকে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তাঁরা আবদুল মান্নান আবাসিক হলে ঢুকে মোশারফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেন। এরপর ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ফয়সাল হোসেন ও রাশেদুল ইসলামকে পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে মোশারফের সমর্থকেরা জোট বেঁধে মনিরুলের সমর্থকদের ধাওয়া করেন। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এ সময় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। খবর পেয়ে দুই প্লাটুন পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মোশারফ ও ফয়সালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ঢাকায় নেওয়ার পথে অবস্থার আরও অবনতি হলে মোশারফকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। ফয়সালকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খাদেমুল ইসলাম দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোশারফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। সহকারী প্রক্টর খায়রুল ইসলাম জানান, জরুরি বৈঠক করে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ২২ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব শিক্ষার্থীকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক হল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হুদা জানান, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো অনুমোদিত শাখা বা কমিটি নেই।সংঘর্ষের পর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় ক্যাম্পাসে যান। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসপি সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।---------------------মোশাররফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি মুক্তাগাছায় শোকের মাতম------------টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত মোশাররফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ মুক্তাগাছার মুজাটিতে বইছে শোকের মাতম । সকল সুখের আশায় রাতদিন ক্লিনিকে কাজ করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতো বাবা শহিদুল ইসলাম। হতভাগ্য ওই বাবা ছেলের মৃত্যুর খবর শুনার পর শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মা সেলিনা খাতুন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শহরে ছড়িয়ে পড়েছে তার শোকের খবর। তারা মানতে পারছেন না একজন মেধাবী ছাত্রের এ ধরণের মর্মানিত্মক মৃত্যু। উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
Previous
Next Post »
Powered By Blogger