মুক্তাগাছায় ছিলো ডাকবাক্স


মনোনেশ দাস , ২৯ মে, শুক্রবার , ২০১৫ : মুক্তাগাছায় ছিলো ডাকবাক্স । ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় একসময় রাস্তার মোড়ে ও পোস্ট অফিসের সামনে দেখা মেলতো ডাকবাক্স । আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে । ইন্টারনেট প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে পরম্পরার ঐতিহ্য । জানা যায়, ডাকপিয়নের ডাকের চিৎকারে যেন ঘুম আমার ভাঙ্গলো, ঐ বুঝি তোমার চিঠি এলো।’ এই অমর সংগীত এখন আর মানুষের মাঝে নাড়া দেয় না। সময়ের পরিক্রমায় এ গান আজ হারাতে বসেছে। অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। যখন প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাকপিয়নের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতেন স্বজনরা। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নে যোগাযোগের বিশ্ব সমাদৃত ডাক ও ডাকপিয়ন আজ বিলুপ্তির পথে। যাদের আত্মীয়স্বজন প্রবাসে থাকতো, তাদের কাছে ডাকপিয়নের কদরের কথা তো বলাই বাহুল্য। প্রাপকের হাতে বিদেশী কোন চিঠি তুলে দিতে পারলেই পিয়নকে সম্মানী দিয়ে খুশি করতেন। তেমন চিঠি নয় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রিয়জনের পাঠানো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য কাগজপত্রের জন্যও পোস্ট পিয়নকে খুঁজতে হতো। অবশ্য ডাকপিয়নও তখন তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথারীতিভাবে পালন করতেন। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্ক্ষিত চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা বা অন্য কোন নথিপত্র যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে দিতেন। এর পাশাপাশি এ সময় যারা আত্মীয়-প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডুকোমেন্ট পাঠাতেন, তারা ছুটে যেতেন কাঙ্ক্ষিত ডাকবাক্সের কাছে। এরই মধ্যে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি ডাকবাক্সে পোস্ট করতে পারলেই তবে যেন স্বস্তি। আর তখন ডাকবাক্সগুলোও লাল রঙে রাঙিয়ে বেশ যত্নে রাখা হতো। শুধু তাই নয়, সে সময় ডাকবাক্সে থাকা চিঠিপত্র যাতে বৃষ্টিতে নষ্ট না হয় সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাও করা হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন তথা আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভব হওয়ায় এখন আর প্রিয়জনের কোন খবরের জন্য ডাকপিয়নের পথচেয়ে থাকতে হয় না। প্রিয়জন পৃথিবীর যে কোন দেশে থাকুক না কেন মোবাইল এবং ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে তার সংবাদ নেয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গে যে কোন চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা যায়। আর তাদের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন করতেও এখন আর পোস্ট অফিস বা ডাকপিয়নের প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই অনলাইন, বিকাশ, এমক্যাশ, মুবিক্যাশসহ যাবতীয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা-পয়সা লেনদেন দ্রুত সম্ভব করা যায় সে কারণে মানুষের কাছে এখন আর ডাকপিয়নের কোন কদর নেই। পাশাপাশি একই কারণে মানুষ এখন আর ডাকবাক্সে বা পোস্ট অফিসে গিয়ে আর চিঠি পোস্ট করেন না। কেবল কোন চাকরি বা সরকারি অফিসের কিছু চিঠিপত্র বা অন্য কোন জরুরি ডকুমেন্টস সরাসরি পোস্ট অফিসে গিয়ে অথবা ডাকবাক্সের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ফলে এ পরিস্থিতিতে ডাকবাক্সের গুরুত্ব একদম কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও আর ডাকবাক্সগুলোর যত্ন নেয়ার প্রয়োজন বোধ হয় না। এমনকি ডাকপিয়নও আর আগেরমতো ডাকবাক্সের খোঁজখবর রাখেন না। ডাকবাক্সে এখন আর তুলির আঁচড় লাগে না। নেই তালা। চলার পথে কখনও কোথাও ২-৩টি ডাক বাক্স চোখে পড়লেও সেটা খুবই জরাজীর্ণ অথবা ব্যবহারের অনুপযোগী, চিঠিপত্র পোস্ট করার অবস্থা খুবই নাজুক। এখন আর ডাকপিয়নের তেমন কদর নেই।
Previous
Next Post »
Powered By Blogger