বৃহত্তর ময়মনসিংহে ধান


মনোনেশ দাস : বৃহত্তর ময়মনসিংহে ধান । বৃহত্তর ময়মনসিংহে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর,টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ । চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে খরচের তুলনায় কম দামে ধান বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। বাজারে এক কেজি ধান বিক্রি করে ৩ টাকা লোকসান গুনছেন তারা। কৃষকরা অবিলম্বে ন্যায্য দামে ধান ক্রয় করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চিলারং গ্রামের কৃষক রমজান আলী জানান, ধান আবাদ করে লাভ হয় না। বাজারে যে দরে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে আবাদ খরচও ওঠে না। একই গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ জানান, তিনি এবার বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এ দামে ধান বিক্রি করে আবাদ খরচ উঠছে না। দুই মণ ধান বিক্রি করে এক জোড়া ইলিশ মাছ কেনা যায় না। রায়পুর গ্রামের সাদেক হোসেন জানান, এক দোন (২৪ শতাংশ) জমিতে বোরো ধান আবাদে ৪০০ টাকার বীজ, জমি চাষে ৬০০, চারা তোলা ও রোপণ করতে ৬০০, সেচ ১১০০, দুইবার নিড়ানিতে ৮০০, ওষুধ ও স্প্রে ৫০০, সার ২১০০, কাটা-মাড়াইয়ে ১৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এক দোন জমিতে ১২ মণ ধান হয়। এ বছর দ্বিগুণ দামে কৃষি উপকরণ ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে বোরো চাষে খরচ বেড়েছে। প্রতিকেজি ধান উত্পাদনে সাড়ে ১৬ টাকা খরচ হয়। বাজারে প্রতিকেজি ধান সাড়ে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে কেজিপ্রতি ৩ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান রাজু জানান, সরকার ২২ টাকা দরে ধান এবং ৩২ টাকা দরে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। ফলে মধ্যস্বত্বেভাগী ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে মজুদে নেমে পড়েছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি কর্মকর্তা আরশেদ আলী খান জানান, সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু হলে বাজারে ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে পাকা বোরো ধান কাটা এখন শেষ পর্যায়ে। এবার ফলনও হয়েছে ব্যাপক। কিন্তু খুশি হওয়ার পরিবর্তে হতাশ চাষিরা। কারণ ধান উত্পাদন করে মণপ্রতি কমপক্ষে ১৫০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। জানা গেছে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি গুদামে কৃষকদের ধান-চাল বিক্রি করতে না পারা, শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য কারণে উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি, আমদানি করা চালে বাজার সয়লাব হওয়ায় ধানের দাম কমে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়া, আগাম বন্যা না আসা, সেচ ও সারের সংকট এবং রোগবালাই না থাকায় এবার এ অঞ্চলে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উত্পাদন হবে। ৫০০ টাকা মণ গড় মূল্যে উত্পাদিত এ ধানের বাজার মূল্য প্রায় ৬ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। এদিকে গত ৩ সপ্তাহ যাবত্ এ অঞ্চলের হাট-বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার ত্রিশাল উপজেলার ধলা বাজারে উফশী জাতের ব্রিআর-২৯ ধান ৫৪০ টাকা থেকে ৫৬০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কিশোরগঞ্জের তারাইল উপজেলার কলমা গ্রামের কৃষক রফিক উদ্দিন খান টিপু (৪২) জানান, গত রবিবার তারাইল বাজারে হাইব্রিড জাতের নতুন মোটা বোরো ধান ৪৫০ টাকা থেকে ৪৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কৃষকরা জানান, সরকারি হিসাবে এবার বোরো মৌসুমে প্রতিকেজি বোরো ধান উত্পাদন ব্যয় ২০ টাকা। সে হিসাবে এক মণ ধান উত্পাদনে খরচ হয়েছে কমবেশি আটশ’ টাকা। এছাড়া এক মণ ধানের খড়ের বিক্রয়মূল্য গড়ে ১০০ টাকা। তারপরও কৃষকরা ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন মণপ্রতি উত্পাদন খরচ থেকে গড়ে কমপক্ষে ১৫০ টাকা কম দরে। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ২০ লাখ কৃষক পরিবার প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ধান উত্পাদন করে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ অঞ্চলের ৭ লাখ ৬০ হাজার ভূমিহীন কৃষক, ৭ লাখ ৫০ হাজার প্রান্তিক আর ৪ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক।
Previous
Next Post »
Powered By Blogger