মনোনেশ দাস :মুক্তাগাছায় ছটপূজা ।বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের(অন্ত্যজ শ্রেণীর) প্রধান ধর্মীয় উৎসব ছটপূজা আগামীকাল বৃহস্পতিবার কাক ডাকা ভোরের আগেই অনুষ্ঠিত হবে । পূজা উপলক্ষে আজ বুধবার বিকাল থেকে ব্রহ্মপুত্রনদ এবং বিভিন্ন পুকুরে ঘাট তৈরি শুরু করেছে পূজার আয়োজকরা । ইতিমধ্যে আটা, গুড় ও তেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পূজার প্রধান উপকরণ শিল্পকর্মে আঁকা ছাপের পিঠা । পূজায় অংশগ্রহণকারীরা জানান , আমাদের স্বজাতীয়রা মুক্তাগাছায় বাঙ্গলী হিন্দুদের সাথে তাল মিলিয়ে দুর্গাপূজা ও কালীপূজায় অংশ নিলেও মূলত এটিই আমাদের মূল সংস্কৃতির পূজা । প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও আমরা নিজ উদ্যোগে কালিবাড়ি পুকুরঘাটসহ পূজার ঘাটগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছি । ছট পূজা যেহেতু ভোর রাতে হয়ে থাকে ( পানিতে অবস্থান নিয়ে দেবতার আরাধনা)সে কারণে অনেক মানুষ গভীর রাতের দিকে ঘাটে পৌঁছে যান। তাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে কারণে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও আমরা করেছি । জানা যায়, ময়মনসিংহে সামাজিক সাংস্কৃতিক বেষ্টনির মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভুত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পরিচয়,পেশা ও ভাষাভাষী অন্ত্যজ শ্রেণীর অবস্থানটি লক্ষ্য করার মত। এ অঞ্চলে এদের সংখ্যা ৫ শহস্রাধিক। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও ভাষাভাষী এই জনগোষ্ঠির বাংলাদেশে তথা ময়মনসিংহে সমাগমের পেছনে লুকিয়ে আছে নানা কৌতুহল উদ্দীপক প্রেক্ষিত। জমিদারী শাসনামলে জমিদারগণ তাদের প্রয়োজনে দক্ষ শ্রমিক, কুশলী শিল্পী, পাহারাদার, সুইপার, মালী প্রভৃতি শ্রেণীর প্রচুর লোক নিয়ে আসে উত্তরভারত ও মধ্যভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। প্রাথমিকভাবে এদের মধ্যে ভাষাগত ও সাংস্কৃতি বৈশ্যাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেলেও সমায়ন্তরে তার সমাধানও রচিত হয়েছে। এখানে দীর্ঘকাল অবস্থানের কারণে(এখানে কাজের নিশ্চয়তা, অধিকতর সন্মানী, নানানবিধ আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা, সর্বোপরী জমিদারদের দীর্ঘমেয়াদী কাজ কখনোই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়া) এইসব বহিরাগত এদের অধিকাংশই মূল ভূখন্ডে ফিরে না গিয়ে স্থানীয়দের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে পেরেছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বিহার থেকে আগত বিহারী, রাজস্থানের মাড়োয়ারী, উড়িস্যার উড়িয়া এবং মধ্যভারতের বিহিকা, লাকড়িগাও, কাটিয়া ভগবানপুর প্রভৃতি অঞ্চলের হরিজন ও ঋষি সম্প্রদায়ের লোক। এদের ধর্ম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবন, ভাষারূপ আলাদা হলেও কখনো পারস্পরিক সংঘাত বাধে না। এদের নিজস্ব ভাষা পারিবারিক জীবনে ব্যবহার করতে পারলেও তারা আর কোথাও ব্যবহার করতে পারে না। বাইরে এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ভাষারূপটিও বর্তমানে তাদের পূর্ব পূরুষদের মতো নেই। ভারতের উপরোক্ত অঞ্চলে ঘটা করে এই ছট পূজার আয়োজন করা হয় বলে জানা যায় ।
EmoticonEmoticon