মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহে মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে(লাশ কাটা ঘর) ঘুষ বাণিজ্য জমজমাট । ঘুষ ছাড়া এমনকি ঘুষ দিয়েও হয়রানির শিকার পুলিশসহ সাধারণ মানুষ । এখানে ঘুষ দিলেই পাওয়া যায় হত্যা মামলার পক্ষে বিপক্ষে মনগড়া রিপোর্ট । ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার, ডোম শিবু এবং এমএলএসএস এর যোগসাজশে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে ।
অভিযোগে প্রকাশ, এখানে ডোম শিবুর মধ্যস্থতায় হয় সকল রিপোর্ট । ফরেনসিক নিয়ম অনুযায়ী লাশের শুধু মাথা কাটার দায়িত্ব ডোমের ওপর থাকলেও প্রফেসর বা প্রভাষকের অনুপস্থিতে তিনিই করেন লাশ কাটা ছেড়াঁসহ ময়নাতদন্ত সংক্রান্ত সবকিছু। এ বিভাগের দায়িত্বে অবহেলা ও দূর্নীতির কারনে প্রয়োজন মত ভিসেরা রিপোর্ট ঢাকা না পাঠনোর কারনে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো এগুচ্ছে না।
যদিও বিভাগ থেকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে পুলিশের গাফিলতিকে। অপরদিকে জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ বলেছেন এর জন্য ফরেনসিক বিভাগের অবহেলাই দায়ী। বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য রাখা ভিকটিমের কিডনি (যকৃত), লিভার, পাকস্থলী ভিসেরা হিসেবে প্লাস্টিকের বোতলে ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এভাবে বছরের পর বছর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পড়ে থাকছে শত শত ভিসেরা। ফলে ময়নাতদন্তের অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য হত্যা ও ইউডি মামলার রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না। মুলতবি হচ্ছে মামলার কার্যক্রম।
সূত্রের দাবী, দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকার কারনে ফরমালিনের কার্যকারিতা অনেকাংশেই হ্রাস পায় । চূড়ান্ত ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা রিপোর্টের অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য অধিকাংশ হত্যা মামলা ও ইউডি মামলার রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে মুলতবি করা হচ্ছে মামলার কার্যক্রম।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী জেলার ১৪টি থানায় দীর্ঘদিন ধরে বহু মামলার কার্যক্রম মুলতবি হয়ে আছে। এর মধ্যে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজেও পড়ে আছে ।
সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, অনেক লাশের ভিসেরা রিপোর্ট না আসায় মামলা মুলতবি হয়ে আছে। উপরোক্তদের মাধ্যমে স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ভিসেরা পরিবর্তন করে ঢাকায় পাঠিয়ে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে একজন স্টাফ জানান, চিকিৎসক ও ডোম শিবু এবং এমএলএসএস নাজমা মিলেমিশে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে এ কাজ করে যাচ্ছে। এ কাজে ৫০ হাজার থেকে ৫-১০ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়া হয়। সূওেত্রর দাবী, ভিসেরার সিলগালায় মেডিকেল অফিসারের স্বাক্ষর ও কর্তব্যরত ডোম সংশিষ্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আগাম নিয়ে রাখেন।
ডোম শিবুকে দিয়ে লাশ কাটাছেঁড়ার কাজ করানো, ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রদানের অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়ে থাকে । ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, মামলা নং ৪৪ তাং ৩/৪/১৬ ,মৃতব্যক্তি তানিয়া, মামলা নং ৩৮ ,তাং ৬/১৬, মৃত ব্যক্তি আয়শা বেগম, ঈশ্বরগঞ্জ থানার মামলা নং ২১৫ /১৬ তাং ৬/৩/১৬ মৃতব্যক্তি লাল বানুর ভিসেরা রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জুতার তলি মুছে যাচ্ছে । এমএলএসএস নাজমা দারোগাদের সকালে একবার বিকালে একবার আসতে বলছেন । যথাসময়ে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা রিপোর্ট ।
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোখলেছুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে ভিসেরা রিপোর্ট না আসার জন্য পুলিশই দায়ী।
অভিযোগ রয়েছে, ময়নাতদন্ত ও ভিসেরার প্রাথমিক ও চূড়ান্ত রিপোর্টে একজনের চিকিৎসকেরই কেবল স্বাক্ষর থাকে, কিন্তু পাশে বিভাগীয় প্রধানের প্রতিস্বাক্ষর না থাকায় ময়নাতদন্তে নিয়োজিত চিকিৎসকরা দুর্নীতি করার একটা বড় সুযোগ পাচ্ছেন। দায়ভার এড়ানোর জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ডাক্তাররা ঘনঘন বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যায়।
জেলার থানাগুলির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, ভিসেরা রিপোর্ট ঢাকা থেকে দেড়িতে আসার কারন হিসেবে বলেন, ফরেনসিক বিভাগের অবহেলার কারনেই ঢাকা থেকে ভিসেরা রিপোর্ট আসতে দেরী হয়। নানা দূর্নীতি ও ডাক্তারদের কাজ নিজেই সম্পন্ন করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডোম শিবু বলেন, দুর্নীতি করি না। রোগীদের স্বজনরা খুশী হয়ে কিছু টাকা দিলে নেই। আর ডাক্তার স্যারদের কাজ স্যারেরা করে আর আমার টা আমি করি।
EmoticonEmoticon