গফরগাঁওয়ে গাফফার খান


মনোনেশ দাস, ১২ মে ২০১৫ :গফরগাঁওয়ে গাফফার খান | গফরগাঁওয়ে গাফফার খান |অবস্থান : ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে রেলপথে গফরগাঁও উপজেলা সদরের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। গফরগাঁও-এর বুক চিরে রেল পথটি বয়ে গেছে রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে, জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এবং বাহাদুরাবাদ ঘাটের দিকে। এর উত্তরে ত্রিশাল ও নান্দাইল উপজেলা, দক্ষিণে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলা, পশ্চিমে ভালুকা উপজেলা, পূর্বে নান্দাইল উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা। প্রশাসনিক এলাকা গফরগাঁও উপজেলা ১টি পৌরসভা, ১৫টি ইউনিয়ন ও ২০২ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল- রসূলপুর, বারবারিয়া, চরআলগী, রাওনা, যশরা, সালটিয়া, গফরগাঁও, মশাখালী, উস্তি, পাইথল, পাঁচবাগ, লংগাইর, দত্তেরবাজার, নিগুয়ারী ও টাংগাব। কান্দিপাড়া গফরগাঁও-এর এক ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে "আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয়" ও 'আবদুর রহমান ডিগ্রী কলেজ' অবস্থিত। ২০০৬ সালে স্কুলটির শতবর্ষ উৎযাপিত হয়। গফরগাঁও উপজেলা দুটি থানা নিয়ে গঠিত, তা হল গফরগাঁও ও পাগলা। গফরগাঁও থানায় প্রথমশ্রেণীর পৌরসভা ছাড়া ইউনিয়নগুলো হল রসূলপুর, বারবারিয়া, চরআলগী, রাওনা, যশরা, সালটিয়া ও গফরগাঁও। আর পাগলা থানার ইউনিয়ন হল মশাখালী, উস্থি, পাইথল, পাঁচবাগ, লংগাইর, দত্তেরবাজার, নিগুয়ারী ও টাংগাব। পাগলা থানা একটি নতুন থানা, যা ২০১২ সালে চালু হয়েছে। ইতিহাস গাফফার খান নামক জনৈক সেনানায়কের নামে 'গফরগাঁও' নামের উৎপত্তি। মুঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহ ও বাংলার বারো ভূঁইয়ার নেতা ঈশা খানের সম্মুখ যুদ্ধটি গফরগাঁওয়ের বাশিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, মানসিংহের কিছু কিছু বংশধর এখনো এখানে বাস করেন। গফরগাঁওয়ের বিরাট একটা অংশ ভাওয়াল পরগনাধীন এবং পূর্বাংশ চর আলগী ইউনিয়ন আঠারোবাড়ি জমিদার প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ড. দীনেশ চন্দ্র সেন কর্তৃক বৃহত্তর ময়মনসিংহের 'মৈমনসিংহ গীতিকা' সংগ্রহকালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র পল্লীকবি জসীম উদদীনকে এই এলাকায় নিয়োজিত করেন। গফরগাঁও অবস্থানকালে জসীম উদদীনের সাথে স্থানীয় রূপাই মিয়ার ঘনিষ্ঠতা হয়। রূপাই মিয়ার জীবনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি কয়েকটি ভাষায় অনুদিত তাঁর প্রখ্যাত কাব্যগ্রন্থ 'নক্সী কাঁথার মাঠ' রচনা করেন। উল্লেখিত রূপাই মিয়া সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন। এই উপজেলায় তিনশতাধিক প্রতিভাবান শৌখিন ও পেশাদার নাট্য এবং যাত্রাকর্মী রয়েছেন। সেইসাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সঙ্গীতশিল্পীও সঙ্গীতচর্চা করে চলেছেন। তাছাড়া প্রতিবছর জারি, সারি, বাউল ও কেচ্ছাগান নিয়মিত চর্চা হয়। ষাটের দশক পর্যন্তও ঘেঁটুগানের চর্চা এই অঞ্চলে নিয়মিত হতো। জনসংখ্যার উপাত্ত শিক্ষা গফরগাঁও সরকারী কলেজ [১] আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রী কলেজ [২] আব্দুর রহমান ডিগ্রী কলেজ [৩] রুস্তম আলি গোলন্দাজ সিনিয়র মাদ্রাসা গফরগাঁও মহিলা কলেজ গয়েশপুর কাওরাইদ কলেজ গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারী হাই স্কুল গফরগাঁও খয়েরুল্লাহ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রসুলপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় রসুলপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় লামকাইন উচ্চ বালক বিদ্যালয় পাঁচবাগ ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পাঁচবাগ ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় অর্থনীতি এটি কৃষিপ্রধান এলাকা। কৃতি ব্যক্তিত্ব শহীদ আব্দুল জব্বার, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং সাহসী বীর। তিনি গফরগাঁও এর রাউনা ইউনিয়নের পাচুয়া ( বর্তমানে জব্বার নগর ) গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। অধ্যাপক ডা: এম এ হাদি, প্রাক্তন উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় ( বি এস এম এম ইউ), এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বি এম এ) । মাওলানা শামছুল হুদা পাচঁবাগী, বিশিষ্ট আধ্যাত্বিক সাধক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক। সর্বোপরি তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারত, পরবর্তীতে পাকিস্তান এবং তারপর স্বাধীন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তিনি বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 'ইমারত পার্টি'র তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি এই উপজেলায় বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও প্রতিষ্ঠাতা। আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ, পরপর তিনবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও গফরগাঁও এর রাজনৈতিক নেতা। তিনি আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আরও অনেক শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা। আস্কর আলী সরকার, আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। রুস্তম আলি গোলন্দাজ, জে, এম, সিনিয়র মাদ্রাসা, রুস্তম আলি উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা । তিনি গফরগাঁও এর শীর্ষ স্থানীয় বাবসায়ী ছিলেন এবং জনপ্রিয় সাংসদ আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ এর পিতা । গফরগাঁওয়ের বেগুন প্রখ্যাত এই বেগুন; যা 'লাফা বাইগুন' নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত, তা গফরগাঁও পৌরসভা সংলগ্ন চর আলগী ইউনিয়নের কেবল চরমসলন্দ গ্রামে উৎপন্ন হয়। রাজধানীসহ দেশব্যাপী এর কদর রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় বাজয়ারজাতকরণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে এর উৎপাদন অনেক হারে হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন বহুবিধ উন্নয়নের সাথে অধুনা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর এলজিইডি কর্তৃক ৮২০ মিটার দীর্ঘ গফরগাঁও-নান্দাইল সংযোগকারী সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার ফলে নান্দাইল, কিশোরগঞ্জের সাথে গফরগাঁওয়ের অবাধ যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার সাথে যোগাযোগ বেবস্থার সুবিধার জন্য খোরশেদমহল সেতু স্থাপন করা হয়েছে,মাঃ শামছুল হুদা সেতু নামকরণ করার কথা ছিল, প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর ফলে গফরগাঁও ও কিশোরগঞ্জ এর যোগাযোগ বেবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে । এটি পাচবাগ ইউনিয়ন ও হোসেনপূর বাজার সংলগ্ন সেতু ।
Previous
Next Post »
Powered By Blogger