মনোনেশ দাস ,১৫ মে ,২০১৫,শুক্রবার : ভালুকায় নিজগৃহে নির্যাতিতা । ময়মনসিংহে ভালুকায় ট্রাক চালক স্বামী সাহাব উদ্দীন শাওনের পাশবিক নির্যাতনে আহত তিন সন্তানের জননী শিউলি আক্তার (৩০) উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শরীরে কালো কালো দাগগুলি শারিরিক নির্যাতনের স্বাক্ষ বহন করছে।
১৩ মে বুধবার ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মহিলা ওর্য়াডে চিকিৎসাধীন গৃহবধু শিউলী আক্তাার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান“৮ মে শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে তার স্বামী সাহাবদ্দীন তাকে ঘরের দরজা বন্ধ করে কড়ই গাছের ডাল দিয়ে সারা শরীরে পিটিয়ে মারাত্বক জখম করে। তার নানী মমলার কাছে হাঁস-মুরগী বেচা কিছু টাকা জমা ছিলো। তাকে সেই টাকা এনে দিতে বলে, টাকা না আনার কারনে তাকে ঘরের দরজ বন্ধ করে মারতে থাকে। এ সময় তার শাশুরী নুরজাহান উঠানে দাড়িয়ে ছিল। পরে তার ছয় বছরের ছেলে সাজ্জাত জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে দরজা খুলে দিলে আশপাশের মানুষ এসে তাকে আধমরা অবস্থায় উদ্ধার করে।
ভালুকা উপজেলার কাঁঠালী বড়চালা গ্রামের বাদল খার মেয়ে শিউলী আক্তার আরও জানান, একই গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে শাহাব উদ্দিন শাওনের সাথে প্রায় ১৪ বছর আগে তার বিয়ে হয়। তার সাথে বিয়ের পূর্বে সাহাবদ্দীনের প্রথম স্ত্রী বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল। বিষয়টি জেনেও তাকে এক রকম জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার বাবা তাকে বিয়ে দেয় বলে সে জানায়। বিয়ের আগে কথা ছিল শাওনকে এক কাঠা জমি দেবেন শিউলীর বাবা। কিন্তু বিয়ের পর আর ওই জমি দেওয়া হয়নি। এর পর থেকেই শুরু হয় তার উপর ট্রাক চালক স্বামীর অমানষিক নির্যাতন। স্বামী তাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য বারবার চাপ দেন। কিন্তু সৎ মায়ের সংসার থেকে টাকা এনে দিতে না পারায় বারবারই শারিরিক নির্যাতন ও নানা ধরনের অপবাদ দেওয়া শুরু করে তাকে ঘিরে। তার স্বামী মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন লোকজন নিয়ে এসে বাড়িতে আড্ডা দেয়। তাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে, টাকার জন্য তাদের সাথে সময় দিতে বলেন। কিন্তু শিউলী আক্তার স্বামীর কথায় রাজি না হওয়ায় তার উপর চালানো হয় নির্যাতন। এরই মধ্যে তাদের ঘরে আসে তিনটি সন্তান। বড় মেয়ে শামছুন্নাহার (১১) সাজ্জাদ (৬) ও সাজেদুল (৫)।
শিউলী আক্তার জানান, নিজের পালিত হাঁস-মুরগী বিক্রি করে নানীর কাছে ১২ হাজার টাকা জমা রেখেছেন । স্বামী তাকে ওই টাকা এনে দিতে বলেন। কিন্তু টাকা এনে না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত শাহাব উদ্দিন গত শুক্রবার (৮মে) সকালে ঘরের দরজা বন্ধ করে শিউলীকে বেদম প্রহার করে। পরে স্বামীর কবল থেকে ছাড়া পেয়ে নানীর বাড়ি গাজীপুরের পোড়াবাড়ী চলে যান সেখানে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ভালুকা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিবেশী মামা হুমায়ুন মুন্সীর সহায়তায় মঙ্গলবার (১২মে) ভালুকা হাসপাতালে এসে ভর্তি হন শিউলী আক্তার। একই দিন ঘটনার বিচার দাবি করে স্বামী শাহাব উদ্দিন শাওন, শাশুড়ি নূর জাহানসহ তিনজনকে আসামী করে ভালুকা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শিউলী আক্তার।
অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। এদিকে, শিউলী আক্তারের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে স্বামী শাহাব উদ্দিন জানান, আরেক ছেলের সাথে তার স্ত্রীর সর্ম্পক রয়েছে। ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সরোয়ার জানান, মহিলার দেওয়া অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্বামী সাহাব উদ্দীনের সাথে একটি প্রভাবশালী মহল যোগদিয়ে শিউলিকে ঘিরে নানা রকম কুরুচিপুর্ণ গল্প এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন।
EmoticonEmoticon