গৌরীপুরে ছিলো জমিদার


গৌরীপুরে ছিলো জমিদার । গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের কাছের উপজেলা গৌরীপুর । জেলা সদরথেকে ১৯ কিলোমিটার পূবে ীবস্থিত ।উপজেলার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে প্রমত্ত ব্রক্ষ্মপুত্র। আর এখানেই ছিল গত শতকের বাংলার প্রভাবশালী ও বিখ্যাত গৌরীপুর জমিদারদের আবাস। বেড়ে ওঠা ঘন ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই জমিদার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ। ইটের তৈরি ইমারতের বিস্তীর্ণ ধ্বংসস্তূপের মাঝে যে ইমারতটি এখনো টিকে আছে, সম্ভবত সেটিই ছিল প্রধান প্রাসাদ ভবন। বাংলাদেশের অন্যান্য জমিদারবাড়ির চেয়ে এই জমিদার বাড়ির স্থাপত্য একটু ব্যতিক্রমী ছিল বলে পন্ডিতদের ধারণা। এখানকার জমিদাররা সম্ভবত ইটের তৈরি ভিতের উপর কাঠের গুড়ির ও ঢেউটিনের আচ্ছাদন বিশিষ্ট হালকা ধরণের অবকাঠামো পছন্দ করতেন। ময়মনসিংহ শহরের ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ধারের একমাত্র কাঠের বাংলোটিও একই ধরণের। বলা হয়ে থাকে গৌরীপুর জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা শ্রী কৃষ্ণ চৌধুরী এই জমিদারবাড়ি তৈরি করেছিলেন। প্রধান প্রাসাদের ভূমি নকশার সাথে উল্লিখিত ইমারতগুলোর ভূমি নকশার তেমন কোন পার্থক্য নেই। দক্ষিণের দিকে মুখ করে থাকা এই প্রাসাদের সামনের দিক প্রায় ৩০ মিটার দীর্ঘ। খিলানসহ একটি কেন্দ্রীয় তোরণ দিয়ে এই প্রাসাদের অন্দরমহলে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। প্রবেশ পথের দুই দিকে বারান্দা সহ বেশ কিছু ঘর আছে। বারান্দার ঠিক সামনেই আটটি গোলাকার স্তম্ভ রয়েছে। এই স্তম্ভ গোলাকার হলেও এর উপরের দিকটা কোরিন্থীয় ধরণের। প্রবেশ পথের উপরের দিকটা ঢাকার আহসান মঞ্জিলের গম্বুজের মত একটি উঁচু খিলানের উপর শিরাল গম্বুজে ঢাকা। প্রবেশ পথের পরেই আয়তাকার মাঠ। বাংলাদেশের আর দশটি জমিদার বাড়ির মতই আয়তাকার মাঠের লাগোয়া নাটমন্ডপ। মন্ডপের উপরের দিক লেঅহার তৈরি কয়েকটি স্তম্ভের উপর ঢেউটিনের ছাদে ঢাকা। এই অঙ্গনের পূর্ব দিকে সমতল ছাদের একটি পারিবারিক মন্দির এখনো বিদ্যমান। মন্দিরের গৃহমুখে পলেস্তরারর উপর লতাপাতার কাজ দেখা যায়। নাটমন্ডপের পাশের খিলান পথ ধরে আরো একটি ভিতর-অঙ্গনে প্রবেশ করা যায়। এই অঙ্গনের তিন দিকে একতলা দালানে বেশ কিছু ঘর এখনো অক্ষত। আর চতুর্থ দিকে অর্থাৎ উত্তর দিকে মূল প্রাসাদ ভবন। এই ভবনের সামনে টানা বারান্দায় গথিক রীতির খিলান দেখা যায়। বারান্দার পিছনে আরো একটি ভবন দেখা যায়। সমতল টিনের ছাদ দেওয়া ভবনটি দোতলা। দোতলায় ওঠার জন্য একটি কাঠের সিঁড়িও রয়েছে। মোট ২৪টি ঘর রয়েছে এই ভবনে। প্রতি তলার ঠিক মাঝখানে নয় মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ও ছয় মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট একটি হলঘর রয়েছে। হলঘরের সাথেই রয়েছে হলঘরের সমান দৈর্ঘ্যের বারান্দা। বাংলোর দেয়াল ও মেঝে দুটোই অধিক মজবুত করার জন্য ইস্পাতের কাঠামো বেষ্টিত কাঠের তক্তা দিয়ে আবৃত করা। দোতলায় ওঠার আরো একটি সিঁড়ি রয়েছে ইমারতের পশ্চিম কোণায়। এছাড়া ইমারতের পিছনে আরো একটি চন্দ্রাতপ (প্যাভিলিয়ন) রয়েছে। বর্তমানে নিতান্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই জমিদারবাড়ি। লাহিড়ী লজ এই মূল ভবনের ৩০০ গজ উত্তরে। ইমারতের পশ্চিমে রয়েছে একটি পুকুর। এই লজটিও বাংলো রীতিতে তৈরি। তবে এই লজটিতে কোরিন্থীয় পিলারের সাথে ডরিক রীতির পিলারও লক্ষণীয়। তবে এই ভবনের অবস্থাও তথৈবচ। মাঝে কিছুদিন এখানেই ছিল গৌরীপুর প্রেস ক্লাব। ছাদ ধ্বসে পড়ছে বলে তারাও সরে গেছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ড থাকলেও তাতে মরচে ধরে গেছে। মরচে ধরে গেছে বলেই হয়তো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আর চোখে পড়ছে না, এই জমিদার বাড়িটিও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।
Previous
Next Post »
Powered By Blogger