ময়মনসিংহে এনে অবৈধ কাজ


ময়মনসিংহে এনে অবৈধ কাজ । ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি : বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার এক কলেজ ছাত্রীর জেল-জরিমানার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি শিকারে গণধর্ষিতাকে জেল-জরিমানায় মুক্ত হয়েই তবে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে ‘একটিবাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ট্রেনিংএর কথা বলে ছাত্রীকে মেলান্দহ হাজরাবাড়ি থেকে ময়মনসিংহে নিয়ে অবৈধ কাজে বাধ্য করেছে। ঘটনাটি জানাজানি হবার পর মেলান্দহ-হাজরাবাড়ি-ঝাউগড়াতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যতই দিন যাচ্ছে বিষয়টি ক্রমেই ধুম্রজালের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রচার নাহওয়ায় এলাকাবাসি সাংবাদিকদের প্রতি ছুড়েন নানা উক্তি। গ্রামবাসির অভিযোগ, হাজরাবাড়ি হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক (লাইব্রেরী) শাহজাহান (৩০) ২৫ এপ্রিল থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা শীর্ষক ৩দিনের কর্মশালায় যান। কর্মশালায় যোগদানের জন্য ২৪ এপ্রিল বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তারই স্কুলের দপ্তরী হারুনের স্ত্রী সাথী মনি (১৯) কেও ট্রেনিংএর কথা বলে বাড়ি থেকে ময়মনসিংহে নিয়ে যান। লম্পট শাহজাহান মাস্টার তারই পরিচিত একবাসায় সাথী মনিকে রেখে ধর্ষণ করে। এরপর সাথি মনিকে রুবেল নামে এক যুবকের নিকট পাচার করে। রুবেল সাথী মনিকে হালুয়াঘাট নিয়ে গণধর্ষণ করে। ২৯ এপ্রিল ভোরে ভারতে পাচারকালে পুলিশের হাতে আটক হয়। সাথী মনির স্বামী হারুন ও এলাকাবাসি আরো জানান- খবর পেয়ে হালুয়াঘাট থেকে তাকে উদ্বার করা হয়। বর্তমানে সাথী মনি ঝাউগড়ায় পিত্রালয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় স্বামী হারুন বাদি হয়ে লম্পট শাহজাহান মাস্টারের বিরুদ্বে মেলান্দহ থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। দুস্কৃতিকারী-লম্পট শাহজাহান মাস্টারের বিরুদ্বে ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসি হাজরাবাড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক-ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুসে ওঠেছে। সাথী মনির স্বামী হাজরাবাড়ি হাই স্কুলের দপ্তরী হারুনের স্বজনদের অভিযোগ; লম্পট মাস্টার হারুনকে উল্টো চাকুরীচ্যুতের ভয় দেখাচ্ছে। হারুন ভয় পেয়ে চুপসে যায়। এতে এলাকাবাসি বিক্ষুব্দ হয়ে হারুনের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। পরদিন এলাকাবাসির পক্ষে জনৈক রানাসহ কয়েকজন হারুনকে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে হালুয়াঘাট থানায় যায়। ফিরে এসে হারুন নারী নির্যাতন-ধর্ষন ও পাচারের অভিযোগে শাহজাহান মাস্টারের বিরুদ্ধে মেলান্দহ থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসিমূল ইসলাম জানান- যেহেতু হালুয়াঘাটে তাদের বিরুদ্ধে বিচার হয়েছে। পুরনো ঘটনা নতুন করে মামলা নিব কিভাবে? তাই ভাবছি। মামলার আইও-ওসি তদন্ত এস আই হালিমুল ইসলাম জানান-অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। আইনী জটিলও আছে। মেয়ের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এলাকায় বলাবলি হচ্ছে লম্পট শাহজাহান মাস্টার ট্রেনিংএর কথা বলে সাথী মনিকে ময়মনসিংহ নিয়ে যায়। তাকে খালাতো বোনের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর পাচারের জন্য রুবেলের হাতে বিক্রি করে দেয়। রুবেলসহ আরো কয়েকজনের দ্বারা সে গণধর্ষিত হয়। একপর্যায়ে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা হালুয়াঘাটে হয়ে তাকে পাচারের চেষ্টা চালায়। ও দিকে পাট-বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির দোহায় দিয়ে কতিপয় সুবিধাবাদী লোক মেলান্দহ থানায় মামলা রেকর্ড না করতে তদবির চালানোর খবরে ফুসে হারুনের পক্ষের লোকেরা। এরপর হারুনের পক্ষের লোকেরা শাহজাহানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ নিয়ে মির্জা আজমের কাছে বিচারের জন্য মোটরসাইকেল বহর নিয়ে জামালপুরে গেলেও মির্জা আজমকে নাপেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। হাজরাবাড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তালেব বিএসসি জানান- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর ৩ দিনের এক সেমিনারে যেতে ২৫ তারিখ থেকে ছুটি নেন শাহজাহান মাস্টার। ট্রেনিং শেষে ওই মাস্টার ফিরে আসছেন। নিয়মিত ক্লাশও করছেন। মেয়েলী কেলেংকারীর ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। তবে আমার কাছে কেও অভিযোগ করেনি। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিও অবগত আছেন। শুনেছি ট্রেনিংএর কথা বলে আমার স্কুলের দপ্তরী হারুনের স্ত্রীও নাকি ওই মাস্টারের সাথে ময়মনসিংহে গেছে। কেন গেছে? আমি জানিনা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক জানান-হাজরাবাড়ি হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক শাহজাহানের নারীগঠিত ঘটনাটি শুনেছি। গ্রেপ্তারকৃত রুবেলের সাথে পূর্ব সম্পর্ক থাকার কথা শুনেছি। তা কতটুকু সত্য জানিনা। সবকিছুই পরিস্কার হবে সাথী মনির বক্তব্যে। ৮নং ফুলকোচা ইউপি চেয়ারম্যান মিন্নাতুল বারী সোহেল জানান-অনাকাংখিত ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। কেও লিখিত অভিযোগ করেনি। হালুয়াঘাট থানা সুত্রে জানাগেছে, গ্রেপ্তারের স্থান থেকে ভারতে দুরত্ব মাত্র ২কি:মি:। তারা একই বাসায় রাত যাপন শেষে ভোরে বের হলে উপজেলা চত্তর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্ন পেয়ে থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশের হাতে ওই সময় গ্রেপ্তার নাহলে মেয়েটি পাচারের সম্ভাবনা ছিল। হালুয়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকিউর রহমান জানান- ২৮এপ্রিল/১৫ ভোরে যুবক-যুবতীকে হালুয়াঘাট থানার টহল পুলিশ শহর থেকে সন্দেহমূলক গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে যুবক নিজেকে রুবেল (২২) এবং কলেজ ছাত্রী নিজেকে মনি (১৯) নামে পরিচয় দেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রথমে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেন। এরপর উল্টা-পাল্টা তথ্য দেয়। একপর্যায়ে জানাগেল-হাজরাবাড়ি হাই স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান ছাত্রী মনিকে ট্রেনিংএর কথা বলে ময়মনসিংহে আনা হয়েছিল। রুবেল সেখান থেকে মনিকে হালুয়াঘাট আনলে পুলিশের হাতে ধরাপড়ে। পরে তাদেরকে মোবাইল কোর্টে হাজির করা হয়। মনি এ কথাও জানায়-কিছুদিন আগেও নাকি শাহজাহানের সাথে বগুড়ায় ট্রেনিংএ গিয়ে ছিলেন।
Previous
Next Post »
Powered By Blogger